ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের স্থান হিসাবে নয়াপল্টনকে টার্গেট করেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ব্যাপক লোকসমাগম জমায়েতের লক্ষে ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত ১১ সাংগঠনিক জেলার নেতাদের সঙ্গে স্কাইপিতে বৈঠক করেছে দলটির হাইকমান্ড।

অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়েও প্রতিদিনই ধারাবাহিক বৈঠক করছেন। এসব বৈঠকে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এড়িয়ে ‘কৌশলে’ চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কোনো মশাল মিছিল না করাসহ বিশৃঙ্খলা এড়াতে সতর্ক থাকার জন্য ঢাকাসহ সব সাংগঠনিক জেলাকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। মঙ্গলবার ২৬ শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। কিন্তু ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনেই এ কর্মসূচি পালনে এখনও অনড় বিএনপি। সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটি বৈঠকেও ঢাকার কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়।

বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ‘স্থায়ী কমিটির সভায় পূর্বে ঘোষিত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের স্থান নির্বাচন নিয়ে এই সরকারের দুরভিসন্ধিমূলক তৎপরতা নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় নয়াপল্টনে গণসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করা হয়। সব দুরভিসন্ধি, বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে ঢাকায় গণসমাবেশকে সফল করার জন্য জনগণকে আহ্বান জানানো হয়।’

বিএনপির ঢাকা বিভাগে ১১টি সাংগঠনিক জেলা হলো-ঢাকা জেলা, ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ জেলা, নারায়ণগঞ্জ মহানগর, গাজীপুর জেলা, গাজীপুর মহানগর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদী। মানিকগঞ্জ জেলার একাধিক নেতা যুগান্তরকে বলেন, গণসমাবেশে যেতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে-এমন অশঙ্কা থেকে ইতোমধ্যেই ঢাকায় অনেক নেতাকর্মী চলে গেছেন। এ জেলা থেকে অন্তত ৪০ হাজার নেতাকর্মী গণসমাবেশে উপস্থিত থাকবেন।

বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, গণসমাবেশের জন্য ঢাকায় আসা শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। তারা আত্মীয়, বন্ধুসহ পরিচিতদের বাসায় উঠেছেন। দূরের জেলা থেকে আসা নেতারা এখনই নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভিড় করছেন। সূত্র জানায়, ঢাকার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে দূর থেকে আসা নেতাকর্মীদের জন্য ইতোমধ্যে থাকা-খাওয়ার দায়িত্ব মহানগর নেতাদের ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে থাকার বিষয়ে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে কাজ করার বিষয়ে হাইকমান্ডের নির্দেশনা রয়েছে।

এদিকে গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই চলছে প্রস্তুতি সভা, মতবিনিময় ও ঘরোয়া বৈঠক। গত এক সপ্তাহ ধরে গুলশান কার্যালয়ে বিভাগীয় সব জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। প্রতিটি বৈঠকে স্কাইপিতে ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ব্যবস্থাপনা, অভ্যর্থনা, প্রচারসহ গঠিত সাতটি উপকমিটির নেতারাও দফায় দফায় বৈঠক করছেন।

এ নিয়ে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয় এখন সরব হয়ে উঠেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। বৃহস্পতিবারও এ দুই কার্যালয়ে ছয়টি বৈঠক হয়েছে। ব্যবস্থাপনা উপকমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ ঘিরে সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে। ঢাকা বিভাগব্যাপী নেতাকর্মীরা সভা করছেন।

ঢাকার নয়াপল্টনে এবং গুলশানে প্রস্তুতি সভা হচ্ছে। নয়াপল্টনেই গণসমাবেশ করব। বাইরে থেকে লোকজন আসবে। এজন্য যা করা দরকার আমরা সব করব।’ ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ সফলে গঠিত কমিটির এই প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সরকারের মধ্যে একটা গ্রুপ গণসমাবেশ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করার জন্য এটি করা হচ্ছে। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। সংঘর্ষ চাই না। আক্রমণাত্মক কিছু নয়। এটা হলো বিভাগীয় গণসমাবেশ।’

গণসমাবেশ সফলের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির দল নেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ সফল করার জন্য নানা কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। বিএনপি ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গণসমাবেশ সফল করতে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছি।’

বৃহস্পতিবার বিকালে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশকে নিয়ে অবৈধ সরকার যেন বেসামাল হয়ে পড়েছে। শুরু করেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার, মিথ্যা কাহিনি সাজিয়ে পাইকারি হারে মামলা, গভীর রাতে নেতাকর্মীদের বাড়িতে ডাকাতের মতো হানা দিচ্ছে।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার চরম মাত্রায় শুরু করেছে আওয়ামী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মনে হয় পুলিশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শপথ গ্রহণ করেছে যেভাবেই হোক ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতে হবে। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতাসহ ঢাকা মহানগর এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এই সরকার জনআতঙ্কে ভুগছে। তাই ঢাকায় গণসমাবেশের কথা শুনেই দিশেহারা হয়ে দমনের নিষ্ঠুর পথ অবলম্বন করেছেন।’

তিনি দাবি করেন, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ‘বিশেষ অভিযান পরিচালনা’ প্রসঙ্গে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে তা দুরভিসন্ধিমূলক। ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করার জন্যই আবাসিক হোটেল, মেস, হোস্টেল, প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি সেন্টারে নিয়মিত তল্লাশি চালানোর কথা বলা হয়েছে। নেতাকর্মীদের হয়রানি ও জনমনে ভীতি তৈরি করাই এর উদ্দেশ্য।

গণসমাবেশ সফলের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির সমন্বয়ক ও ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, সব গণসমাবেশের চেয়ে বড় হবে ঢাকারটি। আমরা সুশৃঙ্খভাবে এ কর্মসূচি পালন করতে চাই। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।